Equity

মাজার নিয়ে চলমান বিতর্ক, বাস্তবতা ও আমার পর্যালোচনা



মাজার নিয়ে চলমান বিতর্ক, বাস্তবতা ও আমার পর্যালোচনা - আব্দুল মোস্তফা রহিম আযহারি

আমার দৃষ্টিতে দেশে ৫ ধরণের মাজার আছে, 

১। হক্কানী অলিদের মাজার

২। রাজনৈতিক নেতাদের মাজার

৩। কাল্পনিক/স্বপ্নে প্রাপ্ত মাজার (যেখানে কারো কোন কবরই নেই)

৪. বিশেষ উদ্দেশ্যে নির্মিত মাজার। মৃত ব্যক্তি কোন অলি বূগূর্গ কিছুই ছিলেন না। কিংবা জীবদ্দশায় ধর্মীয় অনুশাসনও সেভাবে পালন করতেন না, কিন্তু তার সন্তান/আত্বীয়/ভক্তরা সমাজে বিশেষ মর্যাদা লাভের আশায়, নিজেকে মাজারের খাদেম পরিচয়ে ভক্ত অনুরক্ত বাড়ানো সহ নিজের সকল অনৈতিক কাজকে জায়েজ বানানোর বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরিকৃত মাজার।

৫. পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি এমন ব্যক্তির মাজার। এই মাজার আবার তিন ধরনের:

এক. যুগ যুগ ধরে মানুষ সেখানে কবর দেখে আসতেছে, এলাকাবাসী এর ব্যখ্যা জানার জন্য কোন আলেম বা পীরের কাছে গেলে তিনি সেই কবর দেখে হয়ত স্বীকৃতি দিয়েছে যে এটা কোন অলির কবর হতে পারে, তিনি উনার পক্ষ থেকে একটা নামকরনও করে দিয়েছেন (এটি উনার কাশফের মাধ্যমে প্রাপ্তও হয়ে থাকতে পারে) এরপর থেকে সেই নামেই সেই মাজার প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

দুই. মজ্জুব ব্যক্তির মাজার। (মজ্জুব ব্যক্তির কথা হাদিসে আছে, সত্যিকারের মজ্জুব অলি যেমন আছে ঠিক তেমনি মজ্জুবের বেশধারী ভন্ডও আছে) উনার পরিচয় অজানা, ছেলে মেয়ে বা বংশধর নেই, উনার ইন্তেকালের পর ভক্তরা মাজার বানিয়েছে।

তিন. ধর্ম পরিচয়হীন ব্যক্তির মাজার। যাদের জীবদ্দশায় উনি কোন ধর্মের ছিলেন এটা কেউ জানতে পারেনি, উনি নিজেও সেটি ক্লিয়ার করে যাননি। কেউ বলে উনি মানবধর্মে বিশ্বাসী, কেউ বলে মুসলিম, কেউ বলে হিন্দু।

এবার আসি আমরা মাজার বলতে কি বুঝি? কোন মুসলমান মারা গেলে তাকে শরীয়ত সম্মতভাবে মাটির নিচে দাফন করা হলে সেটিকে বলা হয় কবর। যখন সেই কবরটি কোন প্রসিদ্ধ অলি-বূজুর্গের হয়ে থাকে তখন সম্মানার্থে আমরা সেটিকে বলি মাজার। মাজার শব্দের অর্থ যিয়ারতের স্থান। যেহেতু অলিদের মাজার অন্যান্য কবরের তুলনায় অত্যাধিক যিয়ারত হয় সে দৃষ্টিকোন থেকেও সেটিকে মাজার বলা হয়।

কোন হক্কানি অলির মাজার সেটি কাচা হোক কিংবা পাকা হোক সেটিকেই মাজার বুঝানো হয়। মাজার যিয়ারত সর্বসম্মতিক্রমে সুন্নাত। এখানে মাজার বলতে শুধুমাত্র হক্কানী অলিদের মাজার উদ্দেশ্য। কিন্তু এর বাহিরে অন্য যতসব নামধারী মাজার আছে তাদের কোন কর্মকান্ড আমরা সমর্থন করি না। এমনকি কোন হক্কানী অলির মাজারেও যদি শরীয়ত বিবর্জিত কোন কাজ হয় সেটিও গ্রহনযোগ্য হবে না।

যারা মাজার বিরোধী তারা সব মাজারকেই এক চোখে দেখে, তাদের ভাষায় মাজারে যারা যিয়ারত করতে যায় তারা সবাই মাজারপূজারী। অপরদিকে হক্বানী অলিদের মাজার ব্যতিত বাকী যতসব মাজার নির্মানকারী গোষ্ঠী বা ব্যক্তি আছে তারাও নিজেদের বানানো মাজারকে হক্কানী অলিদের মাজারের মতই সত্যিকার মাজার দাবী করে থাকে।

সে জন্য আমি সকলের প্রতি অনুরোধ করে বলব মাজার বললেই যেমন ঢালাওভাবে ভন্ড বলা যাবে না ঠিক তেমনি মাজার বললেই চোখ বন্ধ করে হক্বের সার্টিফিকেটও দেওয়া যাবে না। ইনসাফের ভিত্তীতে সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে কোন লজ্জা নেই।

হালালকে হালাল বলা, হারামকে হারাম বলা, ন্যায়কে ন্যায় বলা অন্যায়কে অন্যায় বলা একজন মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। যে জেনে শুনে অন্যায়কে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে সে আর অন্যায়কারীর মধ্যে কোন প্রার্থক্য নেই। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদের কিছু পর্যায় আছে, যেমন ব্যংকে সুদের লেনদেন হয়,কিছু আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কাজ হয়, অনেক ক্লাবে মদ পান করা হয় সেজন্য যেমন ব্যাংক হোটেল কিংবা ক্লাব আমি ভাংগতে পারবো না ঠিক তেমনি মাজারের অনৈসলামিক কাজ হলেও সেটি আইন ও বিচার ব্যবস্থার মাধ্যম ব্যবস্থাগ্রহন না করে আইন আমি নিজের হাতে তুলে নিতে পারবো না।

তবে এটাও মনে রাখতে হবে ব্যাংক, হোটেল, ক্লাব এগুলো ধর্মীয় স্থাপনা নয়। সেহেতু সে সকল স্থানে মানুষ হারামকে হারাম জেনেই করে। কিন্তু মাজার যেহেতু ধর্মীয় বিষয়, সেজন্য সেখানে ধর্মের নামে অধর্মের কাজ হলে সেটি বন্ধে আলেম সমাজেরও বিশেষ ভূমিকা প্রত্যেকে আশা করে। তাই আইন যেমন নিজে হাতে তুলে না নিতে আলেমগন জনগনকে সচেতন করা উচিত ঠিক তেমনি ইসলামের নামে সকল প্রকার অনৈসলামিক কার্যকলাপ থেকে সকলকে বিরত থেকে সুন্নাত পদ্ধতিতে মাজার যিয়ারত ও সত্যিকার অলি বুজূর্গদের সম্মান করার বিষয়েও মানুষকে সচেতন করা উচিত।

Post a Comment

Previous Post Next Post