Equity

হযরত শাহপরান রাঃ এর জীবনী

হযরত শাহপরান রাঃ এর জীবনী


শাহ পরা্ন (রহঃ) এর পুর্ব পুরুষগণ মুলত বোখারীর শহরের অধিবাসী ছিলেন। তাঁর উধ্বতন ৪র্থ পুরুষ শাহ জামাল উদ্দীন(রহঃ), বোখারী হতে ধর্ম প্রচারে জন্য প্রথমে সমরকন্দ ও পরে তুর্কিস্থানে এসে বসবাস করেন। বংশ সূত্রে শাহ পরাণের পিতা মোহাম্মদ(রহঃ) ও একজন খ্যাতনামা ধার্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। 


তাঁর মাতা হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী(রহঃ) আত্মিয় সম্পর্কে বোন ছিলেন। সে হিসেবে তিনি (শাহ পরান (রহঃ)হচ্ছেন হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী(রহঃ) এর ভাগিনেয়। শাহ পরাণের বয়স যখন ১১ বত্সর তখন তিনি তাঁর পিতাকে হারান। পরবর্তিকালে তাঁর আত্মিয় প্রখ্যাত দরবেশ সৈয়দ আহমদ কবির(রহঃ) এর কাছে তিনি ধর্ম শিক্ষায় দীক্ষিত হন। সেখান থেকে তিনি আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভে নেশাপুরের বিখ্যাত দরবেশ পাগলা আমীন(রহঃ)এর স্মরণাপন্ন হয়ে আধ্যাত্মিক শিক্ষায় দীক্ষিত হন। হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী(রহঃ) যখন বাংলাদেশে উদ্দেশ্যে যাত্রার উদ্যোগ নেন। এ সময় তিনি (শাহপরান(রহঃ)খবর পেয়ে মামার সহচার্য লাভের আশায় হিন্দু স্থানে এসে মামার সঙ্গী হন। 


সিলেট বিজয়ের পর হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ) এর আদেশে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শাহ পরা্ন (রহঃ)সিলেটের নবীগঞ্জ, হবীগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচার করেন। পরবর্তিকালে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ হলে হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ)এর নির্দেশে তিনি (শাহ পরা্ন (রহঃ))সিলেট শহর হতে ছয় মাইল দুরবর্তি দহ্মিণকাছ পরগণাস্থিত খাদেম নগর এলাকায় এসে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বসতি স্থাপন করেন এবং এখানেই জীবনের শেষ সয়ম পর্যন্ত ইসলাম প্রচার করে বর্তমান মাজার টিলায় চির নিদ্রায় শায়িত হন।


শাহ পরা্ন (রহঃ) এর মাজার সিলেট শহরের একটি পুণ্য তীর্থ বা আধ্যাতিক স্থাপনা। যা হচ্ছে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশে আসা ইসলাম ধর্ম প্রচারক হযরত হ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ) এর অন্যতম সঙ্গী অনুসারী শাহ পরা্ন (রহঃ) এর সমাধি। এটি সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর এলাকায় অবস্থিত। হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ) এর দরগাহ থেকে প্রায় ৮ কিঃমিঃ দুরত্বে শাহ পরাণের মাজার অবস্থিত। হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ) এর দরগাহর মতো এ মাজারেওপ্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঐতিহাসিক মুমিনুল হক সহ অনেকেই লিখেছেন; সিলেট বিভাগ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শাহ পরা্ন(রহঃ) এর দ্বারা মুসলিম ধর্ম বিশ্বাষ ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার হয়েছে।


সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিমনগর এলাকায় টিলার উপর একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষের নীচে রয়েছে শাহ পরা্ন (রহঃ)এর মাজার। মাজার টিলায় উঠা নামার জন্য উক্ত মাজার প্রাঙ্গনে উত্তর ও দক্ষিণ হয়ে সিঁড়ি আছে। যা প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু দেখায়। এই সিঁড়িটি মোগল আমলে নির্মিত বলে লোক মুখে শোনা যায়। মাজারের পশ্চিম দিকে মোগল বাদশাদের স্থাপত্বকীর্তিতে নির্মিত তিনটি গুম্বজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদে প্রায় ৫ শত মুসল্লী এক সাথে নামাজ আদায় করে থাকেন। মাজার টিলা থেকে প্রায় ১৫/২০ ফুট দহ্মিণ পশ্চিমে মহিলা পর্যটকদের জন্য এক ছালা বিশিষ্ট দালান ঘর রয়েছে। উক্ত দালানের অল্প পরিসর দহ্মিণ পুর্বে আরেকটি ঘর দেখতে পাওয়া যায়। এ ঘরখানা মুলত বিদেশাগত পর্যটকদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার হয়। এই ঘরের পাশেই একটি পুকুর রয়েছে, যা অজু গোসলের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ) সিলেট আগমন কালে দিল্লী থেকে আসার সময় নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রহঃ) পদত্ত এক জোড়া কবুতর (সিলেটি উচ্চারণ -কৈতর) সঙ্গে আনেন।


কবুতর জোড়া সিলেট নিয়ে আসার পর বংশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ) এর কবুতর বলে জালালী কৈতর নামে খ্যাত হয়। ধর্মীয় অনূভূতির কারণ এ কবুতর কেহ শিকার করতো না। শাহ পরাণ এ বিষয়টি আমলে না নিয়ে,প্রতি দিন একটি করে কবুতর খেতেন। কবুতরের সংখ্যা কম দেখে হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ) অনুসন্ধানে মুল ঘটনা জেনে রুষ্ট হন। একথা শাহ পরা্ন (রহঃ) জানতে পেরে গোপন করে রাখা মৃত কবুতরের পাক হাতে উঠিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন; আল্লাহর হুকুমে কবুতর হয়ে হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ) এর কাছে পৌছে যাও।সাথে সাথে পাক গুলো এক ঝাক কবুতর হয়ে শাহ জালালের কাছে পৌছে গেল। হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী (রহঃ)ভাগিনেকে ডেকে বললেন; তোমার অলৌকিক শক্তি দেখে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি । কিন্তু এ ভাবে প্রকাশ্যে কেরামত প্রকাশ করা সঠিক নয়। সব মানুষের বুঝ শক্তি এক রকম হয় না। এ ভাবে কেরাত প্রকাশের কারণ মানুষ ভুল ব্যাখ্যায় পতিত হতে পারে। এরপর শাহ পরাণকে খাদিম নগর এলাকায় ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দিয়ে সেখানে পাঠিয়ে দেন। শাহ পরাণ খাদিম নগরে ইসলাম প্রচারে তাঁর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিজেকে ব্যস্ত রাখেন এবং এখানেই তিনি চির নিদ্রায় শায়িত হন।

Post a Comment

Previous Post Next Post